বিরল প্রজাতির কৃষ্ণ বর্ণের গম চাষ যেমন লাভজনক তেমনি পুষ্টিকর এতে আছে ১২ ধরনের রোগ প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষমতা।
Table of Contents
আমরা ঐতিহ্যবাহী কৃষিকার্যে বিশ্বাসী, সেই কারণে প্রথাগত ভাবে আমরা যুগযুগ ধরে একই ধরনের সবজি বা ফসল চাষ করে আসছি। তবে অনেক কৃষকই প্রথাগত কৃষিকাজের বাইরে আধুনিক চাষ আবাদ এবং নতুন কিছু জানতে আগ্রহী। প্রচলিত পদ্ধতিতে সাদা গমের চাষ অনেক কৃষকই করে থাকেন যেখানে চাহিদা এবং দাম সিমীত । কিন্তু বর্তমানে অনেক কৃষকই কৃষ্ণ বর্ণের গম চাষে আগ্রহী দেখিয়েছেন, কারণ এই গমের চাষ সাদা গমের তুলনায় অনেক বেশ লাভজনক , এই কৃষ্ণ বর্ণের গমের ফলন সাধারণ গমের তুলনায় অনেক বেশী এবং বিক্রয় মূল্যও অধিক । কৃষকদের কাছে কৃষ্ণ বর্ণের গম চাষ সোনার চাষের সমান হতে চলেছে।

এত দিন যাবৎ আমরা সাদা গমের কথা শুনেছি! কিন্তু কৃষ্ণ বর্ণের গম বা কালো গম শুনলেই হয়তো আপনি চমকে উঠবেন। প্রশ্ন জাগবে, গম আবার কালো হয় নাকি? কিন্তু হয়। বর্তমানে সাদা গমের পাশাপাশি কৃষ্ণ বর্ণের গম চাষ হচ্ছে ভারতেও। এটি সাধারণত রবি মরশুমে চাষ হয়। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, এই কৃষ্ণ বর্ণের গম চাষ যেমন আয় বৃদ্ধি করবে, তেমন মানুষকে মারাত্মক রোগ থেকেও বাঁচাবে। নানা রোগ থেকেও মানুষকে রক্ষা করে। ভারতের উত্তর প্রদেশের বদায়ুন জেলার নরেশ কুমার শর্মা নামে একজন কৃষক প্রথমবারের মতো কালো গমের চাষ করেছেন। কৃষ্ণ বর্ণের এই জাতটি ৭ বছর কঠোর পরিশ্রমের পরে তৈরি করা হয়েছে।
কালো গমের ফলন:
সংবাদ মাধ্যম অনুসারে, নরেশ কুমার শর্মা অর্ধ বিঘা (১০ কাঠা) কৃষ্ণ বর্ণের গম চাষ করে ২ কুইন্টাল ফসল পেয়েছেন। মধ্যপ্রদেশের ধর জেলার সিরসাউদা গ্রামের বিনোদ চৌহান নামে আর এক কৃষক তার ২০ বিঘা জমিতে কালো গম বপন করেছিলেন। তিনি তাঁর ২০ বিঘা জমিতে ৫ কুইন্টাল কালো গমের বীজ বপন করেছিলেন এবং জমিতে এবার ২০০ ক্যুইন্টাল ফলন হয়েছে। কৃষ্ণ বর্ণের গম চাষ করে তিনি প্রভূত খুশি হয়েছেন, কারণ এই বিরল কালো গমের ক্রেতা অনেক বেশ। এই গমে সাধারণ গমের চেয়ে অনেক বেশি আয়রন থাকে এবং এই গম সাধারণ গমের চেয়ে বেশি পুষ্টিকর। এই কারণে সাধারণ গমের চেয়ে কৃষ্ণ বর্ণের গম দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: এবার ৯.১৭ কোটি পরিবারকে সিলিন্ডার প্রতি ২০০ টাকা ছাড় দেবে কেন্দ্রিয় সরকার কিন্তু কারা এই সুবিধা পাবেন]
কৃষ্ণ বর্ণের গমের উৎপত্তি:
পাঞ্জাব মুহালী জেলার নাবি (NABI) National Agri Food Biotechnology Institute থেকে এই কৃষ্ণ বর্ণের গম তৈরী করা হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে এর গবেষণামূলক কাজ গুরু হয়েছিল যা ২০১৭ সালে সফল ভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে, দির্ঘ ৭ বছরের চেষ্টায় কৃষ্ণ বর্ণের গম তৈরী হয়েছে এটি কালো ছাড়াও নীল ও জাম কালারের হয়। সাদা গমে এন্থোসায়ানিনের মাত্রা ৪ থেকে ১৫ PPM থাকে কিন্তু কালো গমে এন্থোসায়ানিনের মাত্রা ৪০ থেকে ১৪০ PPM থাকে সেই কারনে এর রঙ কৃষ্ণ বর্ণের।
[আরও পড়ুন: Singer Sonu Nigam কেকে’র মৃত্যুর পরেও বাতিল নয় পরবর্তী কনসার্ট, এমনটাই জানালেন সোনু নিগম]
কৃষ্ণ বর্ণের গম দেখতে আসলে কেমন:
কৃষ্ণ বর্ণের গম দেখতে আসলে কালোই হয়। তবে গম পিষে ময়দা বের করার পর রঙ কুচকুচে কালো হয় না, এই গমের আটার রুটি দেখতে নীলভা বর্ণের হয় । তবে কালো গমের আটার বিস্কুট বা ব্রেড বানালে সেটার রং পুরোই কালো হয়। আর গমের রং কালো হওয়ার জন্য এন্থোসায়ানিন নামক রঞ্জক কাজ করে , ফলে বিস্কুট বা ব্রেড বানালে সেটার রং পুরোই কালো হয়।

কালো গমের উপকারিতা:
কালো গমে সাধারণ সাদা গমের তুলনায় ৬০ গুণ বেশি জিংক ও আয়রন থাকে। এই বৈচিত্র্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায় যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাধারণ গমের থেকে কালো গম অনেক বেশি পুষ্টিকর। এই গম মানুষকে অনেক মারাত্মক রোগ যেমন সুগার, ক্যান্সার, কোলেস্টরল, হৃদরোগ, স্ট্রেস রক্ষা করতে পারে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । এই প্রজাতির গমে আছে উচ্চ প্রোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, বি ভিটামিন, ফলিক অ্যাসিড, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, আয়রন, কপার, পটাসিয়াম, ফাইবার এবং অ্যামিনো অ্যাসিড , যা আমাদের স্বাস্থের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এছাড়াও এই গমে গ্লুটেন ফ্রি এবং গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকার এই গমের আটা স্বাস্থ্যকর। কালো গম ১২ ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে তাই ক্রমশ এই গমের চাহিদা বেড়েই চলছে। তাছাড়া কৃষকরা যদি এই কালো গম চাষ করেন, তবে এটি তা দের জন্য খুব উপকারী হবে। কারন এই গম একদিকে যেমন কৃষকরা ভাল দামে বিক্রি করতে পারবেন, অন্যদিকে তা স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভালো।
[আরও পড়ুন: সুরেন্দ্রনাথ কলেজের আসন্ন ফেস্টে সুনিধি চৌহান (Sunidhi Chauhan) ও জুবিন নটিয়াল (Jubin Nautiyal) না আসার কারণ]
কালো গম চাষের সময়:
এটি সাধারণত নভেম্বর মাসে অর্থাৎ শীতের আগে বপন করতে হয়। এই প্রজাতির উৎপাদন প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১২ কুইন্টাল হয়। সাদা গমের মতোই এটি রবি মৌসুমে ফসল। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, এটি ৩০শে নভেম্বরের মধ্যে বপন করা উচিত। দেরিতে বপন করলে ফলন অনেক কমে যায়।
বীজের পরিমাণ এবং বীজ শোধন পদ্ধতি:
যদি সারি ভাবে বপন করা হয়, তাহলে প্রতি একর জমিতে ৪০ থেকে ৫০ কেজি বীজের প্রয়োজন হবে। প্রতি কেজি বীজে কার্বেন্ডাজিম @ 2 গ্রাম দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
সেচ ও সারের পরিমাণ:
ভালো ফলনের জন্য ৪ থেকে ৫ বার সেচ দিতে হবে। বপনের প্রথম সপ্তাহের পর প্রথম সেচ দেওয়া হয়। এর পরে, কুঁড়ি ভাঙার সময়, দ্বিতীয় বার কানে দুধ আসার সময় এবং শস্য পাকার সময় সেচ দিতে হবে।
সার প্রয়োগ:
বীজ বপনের সময় ৫০ কেজি ডিএপি, ৪৫ কেজি ইউরিয়া, ২০ কেজি মিউরেট অফ পটাশ এবং ১০ কেজি জিঙ্ক সালফেট প্রতি একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। যখন প্রথম সেচ দেবেন সেই সময়ে ৬০ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
ফলন এবং মুনাফা:
কালো গমের ফলন প্রতি একর জমিতে ১৬ থেকে ১৭ কুইন্টাল পর্যন্ত। কালো গমের দাম সাধারণ গমের চেয়ে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি। কালো গমের বিক্রি প্রতি কুইন্টালে ৭,000 থেকে ৮,000 টাকা পর্যন্ত।
[আরও পড়ুন: এবার বাজার কাঁপাতে আসছে Ambassador New Model 2.0 ইলেকট্রিক ভেহিকল EV]
[আরও পড়ুন: West Bengal HS Result 2022: আজ উচ্চ মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশ এরই মাঝে মেধাতালিকা প্রকাশের সময় পরিবর্তন করা হল]
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি তথ্য ও উপদেষ্টা কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তায় এই প্রকল্প চলছে। জমিতে কালো গম চাষ করতে চাইলে নিকটবর্তী কৃষি দপ্তরে যোগাযোগ করুন।